মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১১

অ্যালার্জির রকমফের / ডা. দিদারুল আহসান


অ্যালার্জি একটি সর্বজনীন বহুল প্রচলিত শব্দ। কিন' এই অ্যালার্জি সম্পর্কে সঠিক ধারণা কিন' আমাদের অনেকেরই নেই। শ্বাসকষ্ট, অ্যাকজিমাসহ বহু চর্মরোগেরই কারণ হচ্ছে অ্যালার্জি। তাই অ্যালার্জি সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।
সচরাচর নির্দোষ বলে গণ্য কোনো জিনিস যদি শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তবে তাকে অ্যালার্জি বলা হয়। যেসব দ্রব্য অ্যালার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় এলারজেন বা এন্টিজেন এবং এসব দ্রব্য দেহে প্রবেশের ফলে দেহের অভ্যন্তরে যে দ্রব্য সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় এন্টিবডি। এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরস্পর মিলিত হলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় অন্টিজেন-এন্টিবডি বিক্রিয়া।
হাঁপানির সাথে অ্যালার্জির গভীর সংযোগ আছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রঙের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধুলো, পুরনো ফাইলের ধুলো দেহে অ্যালার্জিক বিক্রিয়া করে। হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই যারা হাঁপানিতে ভুগছেন তাদের এগুলো পরিত্যাগ করে চলতে হবে।
ছত্রাক দেহে অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। ছত্রাক হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র সরল উদ্ভিদ। ছত্রাক ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৩১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উত্তাপে জন্মে, ভেজা পদার্থে এই ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো খাদ্য ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পনিরে ছত্রাক মিশিয়ে তৈরি করা হয়। কোনো কোনো পাউরুটি এবং কেক তৈরি করতেও ুবধংঃ জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পেঁয়াজ ও ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়। এই ছত্রাক ও অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।
ঘরের ধুলো হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির জন্য একটি অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলোতে একটি ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে যা কি না মাইটনামেই সচরাচর পরিচিত। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য এই মাইটদায়ী। ঘরের ধুলো সে জন্য যারা হাঁপানিজনিত অ্যালার্জিক সমস্যায় ভোগেন তারা ঘরের ধুলো সব সময় এড়িয়ে চলবেন। বিশেষ কর যখন ঘর ঝাড়- দেবেন তখন সেখান থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। ঘরের আসবাবপত্র কম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ প্রভৃতিতে যে ধুলো জমে থাকে তা পরিষ্কার করার সময় দূরে সরে থাকতে হবে।
খাদ্যে প্রচুর অ্যালার্জির সম্ভাবনা থাকে যেমন- দুধে অ্যালার্জি, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে খুবই বেশি অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। গরুর দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, হাঁপানি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া গমে অ্যালার্জি, ডিমে, মাছে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া বাদাম, কলা, আপেল, আঙুর, ব্যাঙের ছাতা, তরমুজ, পেঁয়াজ, রসুন, চকোলেট, এমনকি ঠাণ্ডা পানীয় কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।
পতঙ্গের কামড়ে গায়ে চুলকানি, 'ানটি ফুলে যাওয়া এমনকি হাঁপানি পর্যন্তও হতে দেখা যায়। মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল প্রভৃতি পতঙ্গের কামড়ে দেহে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়াও রোমশ ও পালকবিশিষ্ট জীবজন'- যেমন বিড়াল, কুকুর, অশ্ব, প্রভৃতি গৃহপালিত পশু অনেক সময় অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এ ছাড়া একটি চর্মরোগ আছে যাকে আর্টিকেরিয়া, বাংলায় কেউ কেউ আমবাতও বলে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ত্বকে চাকা চাকা হয়। আর ফুলে উঠে চুলকাতে দেখা যায়। এটিও হলো অ্যালার্জির অন্যতম প্রকাশ। অধিকাংশ লোকের জীবনেই কোনো না কোনো সময় এই রোগ হতে দেখা যায়। এই আর্টিকেরিয়া শরীরের কোনো অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে অথবা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বিভিন্ন আকারের লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে দেখা যায় এবং সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি। অনেকগুলো কারণ এর মধ্যে খাদ্য অ্যালার্জি থেকেও এ রোগ হতে পারে। যেমন- বাদাম, ডাল, গোশত, ডিম ইত্যাদি। এ ছাড়া এই অ্যালার্জির সৃষ্টি পতঙ্গ থেকেও হতে পারে যেমন- বোলতা, মৌমাছি, ভীমরুল, মাকড়সা প্রভৃতির কামড়ে এই অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া ওষুধে অ্যালার্জি হতে পারে। অনেক ওষুধই অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর মধ্যে পেনিসিলিন আর অ্যাসপিরিন অন্যতম।
জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথার ব্যথা, পাচড়া, ফোড়া ইত্যাদির জন্য এই ওষুধ দুটো আমরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই খেয়ে থাকি। কিন' মনে রাখতে হবে এর থেকে গায়ে অ্যালার্জিজনিত চুলকানি তো হতেই পারে। এমনকি পেনিসিলি ব্যবহারের কারণে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। এ ছাড়াও আরো অসংখ্য ওষুধ আছে যা খেয়ে গায়ে অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
আমরা শিশুদের টিকা দিয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে কোনো কোনো টিকা বা ভ্যাকসিনে ব্যক্তিবিশেষে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। তাই ভ্যাকসিন দেয়ার পর আপনার শিশুকে যদি অ্যালার্জি চুলকানি বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় তাহলে অবশ্যই আপনার শিশুকে ডাক্তারের কাছে নেয়া উচিত।
মোট কথা অ্যালার্জি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। আপনি অ্যালার্জিতে ভুগলে লক্ষ করবেন কোনো খাবারে আপনার অ্যালার্জি হয় কি না? যদি খাবারের সাথে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়, তবে সেই খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মোট কথা যে কারণে আপনার অ্যালার্জি হয় সেই কারণ এড়িয়ে চলতে হবে।
লেখক : চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, গ্রিন রোড, ঢাকা

1 টি মন্তব্য: